দেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে ভুয়া সনদ ও ভুয়া মার্কসিট দিয়ে মেধাবী কোটায় ভর্তি হচ্ছে সার্কভুক্ত দেশের শিক্ষার্থীরা। এজেন্ট নামধারী জাল-জালিয়াতি চক্র ও দেশের সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মচারীদের যোগসাজশে অযোগ্য শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ গ্রহণ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও নেপালের কিছু সংঘবদ্ধ অসাধু জালিয়াতি চক্র প্রতি বছরই সার্ক কোটায় শিক্ষার্থীদের আবেদনপত্র ও মার্কশিট ঘষামাজা করে নাম্বার বাড়িয়ে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়ার ব্যবস্থা করছে। মোটা অংকের আর্থিক ও বিশেষ সুবিধায় নিয়েই তারা ভর্তির ব্যবস্থা করে দিচ্ছে বলে জানা যায়। সার্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদেশী মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিনা টিউশন ফিতে বাংলাদেশের মেডিকেল করেলজে পড়ার সুযোগ করে দেন। যা বাংলাদেশের জন্য অত্যান্ত সম্মানজনক ও বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে। বর্তমানে মেধাবী কোটার আসন সংখ্যা ১১৭টি। দেশে বর্তমানে ১১৩টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ৩৭টি রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি মেডিকেল কলেজ সার্কের মেধাবী কোটায় শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ রয়েছে।
২০২৪-২০২৫ সেশনে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির জন্য গত ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে এ্যাম্বেসির মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সার্কভুক্ত দেশের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন করেন। এরপর আেিবদনপত্রগুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দফতরের ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (আইও) গ্রহণ করে। আইও আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই এবং মেধা তালিকায় চূড়ান্ত করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা দফতরে পাঠিয়ে দেয়। তারা যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরী করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে ২০২৪-২০২৫ সেশনে ভারত থেকে আবেদনব পড়ে প্রায় শতাধিক। এর মধ্যে মেধা তালিকায় ২২ শিক্ষার্থীর নাম চূড়ান্ত করা হয়। পরিচালক চিকিৎসা শিক্ষা ফলাফল প্রকাশের আগে ভারতীয় শিক্ষার্থীর চূড়ান্ত তালিকা গোপনে প্রচার হয়ে যায়। যা মেডিকেল কলেজ রিপ্রেজেনটিভ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমসিআরএবি)-এর দৃষ্টিগোচর হয়। এসোসিয়েশন ওই তালিকা সংগ্রহ করে তাৎক্ষণিক ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তী সময় ১১ জনের নাম স্থগিত করা হয় এবং ১১ জনকে চূড়ান্ত ঘোষণা করে। তাদের মধ্যে ৬ জনের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে ৩ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির তালিকায় রয়েছে। গত ২৪ মে ফলাফলের ৬ জন শিক্ষার্থীর নাম প্রকাশ করা হয়।
এ ব্যাপারে চিকিৎসা ও শিক্ষা দফতরের পরিচালক প্রফেসর ডা, মো. মহিউদ্দিন মাতুব্বরের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আবেদনের ভিত্তিতে ভারতীয় ১২ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। এরপরও যদি কোন অভিযোগ পাওয়া যায়। তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো বলে জানান তিনি।
সূত্র বলছে, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা তালিকায় রয়েছে। তারা হলেন, আদনান আলম, তুবা হাকিম এবং ওসামা হাবিব। এর তিন জন স্যার সলিমুল্লাজ মেডিকেল কলেজে ইতোমধ্যে ভর্তি হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির তালিকায় রয়েছে, আনিকা ফারুকীর নাম। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়েও তিনি ভর্তি হননি। এছাড়া দেশের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ইয়াহহিয়া হোসেন তালুকদার, রাজশাহী মেডিকেল কলেজে সাইফুল ইসলাম তপাদার, রংপুর মেডিকেল কলেজে বিশ্বনাথ সিং এবং সিলেটের এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজে আশফাক আহমেদ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে সাদিয়া মোজাফ্ফর ও জান্নাত রাফাক রয়েছে। এরা সবাই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দা। এদের আবেদন ফরম দেখে প্রতিয়মান হয়, সব আবেদন ফরম একই হাতে একই কলমের কালিতে পূরণ করা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, একটা সংঘবদ্ধ চক্র প্রতারণার মাধ্যমে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মেডিকেল কলেজ রিপ্রেজেনটিভ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমসিআরএবি)-এর সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ মোফাজ্জুল করিম বলেন, ভারত এবং নেপালের একাধিক চক্র দীর্ঘ দিনযাবত বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজে ভর্তির ব্যাপারে সোচ্চার। তারা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে মেধাবী কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে। চলতি সেশনে আমাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১১ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। ২০২০-২০২১ সেশনে এই চক্রই একই পদ্ধতিতে মেধাবী কোটায় জালিয়াতির মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি করে। যা আমাদের অভিযোগের কারণে এবং সত্যতা প্রমাণের পর ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ভর্তি স্থগিত করা হয়। তিনি আরও বলেন, এই জালিয়াতির কারণে প্রকৃত মেধাবীরা ভর্তি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত করে এদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা গেলে সার্কভুক্ত দেশের মেধাবী কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তির সুফল বয়ে আনবে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ভারতীয়রা খুবই খারাপ, তারা ভুয়া ও জালিয়াতির মাধ্যমে ভারতের শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজে ভর্তি সুযোগ করে দেয়। দেশের সংশ্লিষ্ট সেক্টরের অসাধু কর্মচারীরা অর্থের বিনিময়ে এই জালিয়াতিতে সহযোগিতা করছে বলে জানান তিনি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

ভুয়া সনদ ও মার্কশিটে মেডিকেল কলেজে বিদেশি শিক্ষার্থীরা
- আপলোড সময় : ২৬-০৬-২০২৫ ১২:০৫:১০ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৬-০৬-২০২৫ ১২:০৫:১০ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ